৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ৪:৪৬

তারা সভাপতি দাবিদার !

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

৬ মাস আগে বিলুপ্ত করা হয় জেলা বিএনপির কমিটি, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটিও ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। একইসাথে শীঘ্রই নতুন কমিটি গঠন করা হবে এমন সব ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দাবীদার নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও তাদের কর্মীসমর্থকরা। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রায় একডজন নেতা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে বলে দাবী নির্ভরযোগ্য সুত্রের।

জেলা বিএনপির সভাপতি পদ-প্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে সভাপতি হতে আগ্রহী সদ্য সাবেক হওয়া সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সদ্য সাবেক হওয়া সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান।

অপরদিকে, মহানগর বিএনপির সভাপতি হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নতুন কমিটি গঠন হলে বর্তমান কমিটির সভাপতি সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আবারো চাইবেন সভাপতি হতে। তবে সভাপতি পদে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দি হতে পারেন সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। এছাড়াও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, সহ-সভাপতি এড. জাকির হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টুও হতে পারেন সভাপতি পদে অন্যতম দাবিদার। মহানগর যুবদলের সভাপতি খোরশেদও সভাপতির পদ প্রত্যাশী বলে জানায় তার কর্মী সমর্থরা।

দলীয় সুত্রে জানা যায়, কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর দু বছর পর জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটি তিন বছর আট দিনের মাথায় চলতি বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

অপরদিকে, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী সাবেক এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ১৩ অক্টোবর এক ভার্চুয়াল সংলাপে মহানগর বিএনপির কমিটি শীঘ্রই ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্র।

জানা যায়, জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকে কখনোই কমিটি দুটির সকল নেতৃবৃন্দদের একসাথে কোনো আন্দোলন কর্মসূচী করতে দেখা যায় নি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ দু/চারজন নেতা ছাড়া বাকীদেরকে ঠিকমতো রাজপথে দেখা বা পাওয়া যেত না। একজন একদিন আসলে, তিনি আর পরের কর্মসূচীতে আসতেন না, সেদিন আবার দেখা যায় অন্য কোনো নেতা এসেছেন। নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত থাকতেন প্রায় সকলেই, এভাবেই চলছিল জেলা কমিটির কার্যক্রম। একইসাথে, জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এড. তৈমুর আলমের নেতৃত্বাধীণ একটি পক্ষ আলাদাভাবে জেলা বিএনপির ব্যানারে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যান।

মহানগরেও ছিলো একই অবস্থা। মহানগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর আবুল কালামকে গত তিন বছরে ৩ বারও রাজপথে দেখা যায় নি বলে জানান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী, তিনি তার বাসভবনেই চালাতে দলীয় সকল কার্যক্রম, রাজপথের কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। অপরদিকে, আংশিক কমিটি গঠনের পর থেকেই মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত তাদের অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করতেন। তাকে প্রায় সবসময়ই দেখা যেতো আন্দোলন সংগ্রামে, রাজপথে থেকেই তিনি প্রতিটি দলীয় আন্দোলন, সংগ্রাম ও কর্মসূচী পালন করেছেন বলেও জানায় তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।

তৃণমুলের দাবী, সভাপতি হতে চাইলেই তো আর সভাপতি হওয়া যায় না। কেন্দ্রের উচিৎ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে বিগত সময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলো তাদের মধ্য থেকে মেধাবী ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দুজনকে দুই সভাপতির পদে আসীণ করা। কেন্দ্র যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পূর্বের ন্যায় এবারও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বলতার পরিচয় দিবে এবং দলীয় আন্দোলন কর্মসূচী ব্যর্থ হবে বলে ও মনে করেন তারা।

কেন্দ্রীয় সুত্রে জানা যায়, কেন্দ্রও এবার তৃণমুলের চাহিদাকে প্রাধাণ্য দিয়ে যারা রাজপথে ছিলো তাদেরকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দিবেন। যারা ঘরকুনো হয়ে বা সরকারী দলের সাথে আতাঁত করে চলাফেরা করে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী তো দুরের কথা, জেলা বা মহানগর বিএনপির কমিটির সদস্য পদেও রাখা হবে না বলে সুত্রটির দাবী।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আমি বিগত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে দলীয় আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছি। আপনারা সাংবাদিকরাই দেখেছেন, কারা রাজপথে ছিলো, কারা রাজপথে ছিলো না। যেহেতু আমি সবসময়ই রাজপথে ছিলাম তাই আমি অবশ্যই সভাপতির দাবিদার। দল যদি মনে করে তাহলে দায়িত্ব দেয়া হলে অতীতের মতো এবারও আমি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো এবং দলকে আরো বেশী শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করবো।

মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আগে কমিটি ভাঙ্গা হোক তারপর দেখা যাবে কে কোন পদ চায় বা কেন্দ্র কাকে কোন পদে দেয়। তবে দল যাকে যেখানে প্রয়োজন করবে তাকে সেখানেই দিবে এবং দলের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.